আপেল যুদ্ধ

applegarden

একজন সিপাহী বর্ডারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। বর্ডারটা এমন স্থানে যেখানে অনেক আপেল গাছ আছে। সেই আপেল বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট একটা নালা। এই নালার ওপর পাশে আরেক দেশের বর্ডার।

বর্ডারে আশেপাশে গ্রাম বলতে অনেক দূরে। আর এই বাগানে সচারচর কেউ আসে না। একমাত্র আর্মিরা ছাড়া।

সেদিন অনেক বরফ পড়েছিল। তাই কোন কিছুই বোঝা যাচ্ছিলো না। সিপাহীটা একলা মনে সেই আপেল বাগানের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে ভুল করে ওপারের দেশে বর্ডারে চলে গেছে। কারণ বরফে সে দেখতে পারিনি তার সীমানা। হঠাৎ তার অনেক ক্ষিধা লেগে গেলো। এখন কি করবে ? সে দেখলও তার কাছে কোন খাবার নাই। ভুল করে ক্যাম্পে রেখে এসেছে। সে দেখলও আপেল গাছে অনেক আপেল ঝুলছে। এই দিকে তার ক্ষুদাও লাগছে। আপেলের লোভ সামলাতে পারছে না। এইখান থেকে একটা পেড়েই খাই। তাই সে একটা আপেল পেড়ে খেতে শুরু করলো। সে একটা আপেলটা খেয়ে বলল,

বহৎ আচ্ছা হে। ইত্না আচ্ছা আপেল মে জিন্দেগি মে নেহি খাইয়া।

হঠাৎ পিছন থেকে একজন বলে উঠল,

জনাব আপ কন হো, আপকো মে পেহেচান্তা নেহি, আপকা আইডি দেখাইয়ে

এবার ওই সিপাহী টের পেল সে তার সীমানায় নেই।

সিপাহী বলল,

মে ইদার রেহেতা হু। মেরা আইডি মেরা পাস নেহি হে, ও ভুলকে ক্যাম্প পে ছোর আয়া

এরপরও আগুন্তক অনেক গুলো প্রশ্ন করলো

সিপাহী কোন রকম সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, কোন মতে সে ওইখান থেকে পালালও।

সিপাহীকে তো আচ্ছা মত প্রশ্ন করে অনেক ঝামেলায় ফেলানোর কারণে, সিপাহী অনেকটা রাগ হল। সে এর প্রতিশোধ নিতে চাই। তাই সে অনেক চিন্তা ভাবনা করে একটা বুদ্ধি বের করলো।

এবার সে তার বড় সাহেবকে সব কথা বলল। তার বড় সাহেব আপেল খুব ভালবাসে। তখন সিপাহী বলল,

ওই পাশের অনেক সুন্দর ও খুব স্বাদের আপেল আছে, আমাদের উচিত ওদের সব আপেল গুলো কেড়ে নিয়ে আসা। আর তাঁরা আমাদের নিয়ে অনেক বাজে ভাবে মজা করেছে।

এইসব শুনে বড় সাহেব খুব ক্ষেপে গেলো। সব সিপাহীদের ডাকলো। এখনই ওদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আমাদের অপবাদের বদলা নিতে হবে। আর তাদের সব আপেল গুলো আমার চাই।

সব কিছু সময় মত প্রস্তুতি নিলো তারা।

তুমুল আকারে যুদ্ধ শুরু হল। সারারাত যুদ্ধ হল। আরা এই পাশ দিয়ে বোমা মারে। আবার ওই পাশের বর্ডার থেকে বোমা মারে। অনেকক্ষন যুদ্ধ হওয়ার পর। সবাই ক্লান্ত। দুইপাশের বর্ডারের যুদ্ধ থামিয়ে দিলো। ওই পাশের বর্ডারের হার মেনে ওই স্থান ত্যাগ করলো।

এবার বড় সাহেব বলল সূর্য ওঠার অপেক্ষা কর। সকাল হলে ওদের সব আপেল গুলো নিয়ে আসা যাবে। তারা অপেক্ষায় থাকলো।

সূর্য উঠলো, বড় সাহেব তাবুতে আরাম নিচ্ছে। এই সময় এক সিপাহী এসে বলল,

সাব জী আপ বাহার আজাহিয়ে,

কেয়া হুয়া, ছাব আপেল লেকে আয়া, বড় সাহেব বলল

সিপাহী বলল,

পেহেলে আপ বাহার আজাহিয়ে, দেখলিয়ে কেয়া হুয়া।

এবার বড় সাহেব তড়িঘড়ি করে বের হয়ে আসলো। বের হয়ে এসে অবস্থা দেখে হা করে তাকিয়া রইল। আর এক হাত দিয়ে মাথা ঠোকাতে লাগলো। আর বলতে লাগলো,

এ মেনে কেয়া দেখরাহু।

আসলে রাতে যে যুদ্ধ হয়েছে সব আপেলগুলো ঝড়ে পড়ে গেছে। আর সব আপেলগুলো নালা দিয়ে ভেসে আরেক ছোট দেশের বর্ডারে গিয়ে পড়েছে। একটা আপেলও নাই।

হাইরে কপাল। বেশী লোভে আপেল নষ্ট ।

Collected by : Madman

দ্বীনবন্ধুর ডাইরি

notebook-1939358_1280

সিগারেটটা ধরিয়ে আমি কেদারায় বসে টানছিলাম। হঠাৎ আমার এক পুরানো বন্ধুর ফোন এসেছিল। অনেক অনেক দিন হয়ে গেছে তার সাথে দেখা হয় না। সিগারেট টানতে টানতে হঠাৎ সেই পুরানো স্মৃতিতে ফিরে গেছি। মনে করে দিল সেইদিনের কথা গুলো। ইস কিনা দিন ছিল। একটা ঘটনা ঘটেছিল সেই সময়। আনুমানিক ২০০৪ হবে,

ঘটনাটা ২০০৪ সালের দিকে কথা, আমি তখন শিক্ষাঙ্গন কোচিং সেন্টারে পড়াশুনা করতাম। আমাদের প্রধান স্যাররের নাম ছিল দ্বীনবন্ধু। আমাদেরকে সবসময় শাসন করতো।

একদিন বিকেল বেলা আমি আর আমার কিছু বন্ধু রাস্তায় হাঁটছি। কোচিং শেষ করেই বের হয়েছি। হঠাৎ এক বন্ধু বলে উঠলো যে বড় স্যারকে একটু বিপদে ফেলান দরকার। অনেক শাসন করে ফেলছে। কিছু একটা করা দরকার। আমি ওদের ভিতর এক মাত্র বলদ ছিলাম। আমি সব কিছুতে ভয় পাইতাম। আমি প্রথমে না বলেছিলাম।

কিন্তু সবাই নাছড় বান্দা। কিছু একটা করে ছাড়বে। কি করা যাই। সেটা ভাবতে ভাবতে মাসুম বলে উঠল ডাইরি চুরি করতে হবে। কারণ ওটার ভিতর তার সব হিসাব থাকে। যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এবার করাই লাগবে।

আমারা সবসময় পিছনের বেঞ্চে বসতাম। কারণ পড়া না পারলে যাহাতে স্যার মারতে ঠিকমত না পারে। কিন্তু আজ আমরা বড় স্যাররের পাশের টেবিলে বসলাম। আমি, পাপ্পু, মাসুম, যুবরাজ আর ইমু। আমাকে একেবারে স্যাররের সামনে বসিয়ে দিল। যাহাতে স্যার সন্দেহ না করে। আসলে আমি তো হাবাগোবা মানুষ। আমাকে সন্দেহ করাটা কারোর মনেই আসে না। সেদিন যে আমি কি ভাবে ডাইরিটা সরিয়ে ওদের হাতে দিলাম। এটা আমার কল্পনার বাইরে। কোচিং শেষ করে বের হলাম। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। জানিনা ডাইরিটা কার কাছে আছে। কারণ আমি ওদের হাতে দিয়ে চলে গেছিলাম।

পরেরদিন ভিতর থেকে অনেক হৈচৈ শুনা যাচ্ছে। ভিতরে যেতে দেখি দ্বীনবন্ধু স্যার সব স্যারদের সাথে খুব রাগান্বিত স্বরে কথা বলছে। ব্যাপারটা আমার বোঝার আগেই স্যার আমাকে জীজ্ঞাসা করল,

স্যার> তুই কি জানিস কে আমার ডাইরি চুরি করেছে।

আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম। তারপরও উত্তর দিলাম,

আমি> না স্যার, আমি কি করে বলব।

স্যার আর কিছুই না বলে অন্য রুমের দিক চলে গেল। বাকি সবাই এমনভাবে আসলো যে কেউ কিছুই যানেই না।

স্যার তো এইদিকে সবাই কে একই প্রশ্ন করছে। সবার কাছে না শব্দ ছাড়া আর কিছুই সে পেল না। স্যার তো খুব চিন্তাই ছিল। আমরা তো স্যাররের কাণ্ড দেখে মিটিমিটি হাসতে ছিলাম।

স্যার বলে উঠল সবাইকে কাল পড়া চাল খাওয়াবে। যে মিথ্যা বলবে তার গলা দিয়ে রক্ত বের হবে।

ঐদিন বিকেলে মাসুম বলল চল, আমি বললাম কোথায় ? মাসুম বলল আমার বাসায়।

আমি মাসুমের বাসায় গিয়ে অবাক, কারণ ডাইরিটা মাসুমের বাসায় ছিল। মাসুম বের করে কি যেন হিসাব দেখছিল। আমি বললাম ওটা দিয়ে আই। ধরা পড়লে সব শেষ হয়ে যাবে। মাসুম বলল না তারে আরেকটু চিন্তায় ফেলাই। কিন্তু চাল পড়া খাওয়ালে যদি কিছু হয়। মাসুম বলল ওইসব ফালতু কথা কিছুই হইত না।

আসলে পরেরদিন তাই ঘটল কিন্তু কিছুই হল না। একটু তো ভয় পেয়েছিলাম যদি কিছু হয়ে যাই।

বেশ কয়েকদিন পর মাসুম বলল আমাকে এটা বারান্দার ভিতর ফেলে দিয়ে আই। আমি একটু ভয় পাচ্ছিলাম। আমি ডাইরিটা নিয়ে ঠিকই সন্ধ্যায় গিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালা আমাকে দেখে ফেলে।

হাজার হোক মিথ্যার পরাজয় হবেই। ঠিক তাই হল। পরেরদিন কোচিং এ ঢুকতেই আমাকে ধরল। আমি না স্বীকার করলেও মাসুমের বাবা স্যারকে সব বলে দিয়েছে। কারণ ঐদিন বিকেলে মাসুমের বাবা আমাদের দুইজনের কথা সব শুনে ফেলেছিল। আর বাড়ীওয়ালা আমাকে দেখেছিল। তাই আর লুকিয়ে কোন লাভ নাই। স্যাররের লাঠির বারিতে আমরা সব বলেই দিলাম। শেষ হল দ্বীনবন্ধু স্যাররের ডাইরি চুরির কাহিনী।

আজ সত্যি নিজেকে কেন জেনো খুব দোষী মনে হচ্ছে। দুঃখিত দ্বীনবন্ধু স্যার।

আজ আবার আমার ওই বন্ধুদের সাথে মিলিত হবো। কি যে আনন্দ লাগছে টা বোঝাতে পারবো না।

Collected by : Madman

The Last Summer

IMG20171115115510

প্রচণ্ড গরম। এই বছরে অনেক বেশি গরম পড়েছে। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে জানালার পাশে দাড়িয়ে সজল মনে মনে নিজেই বক বক করছে আর বলছে ,জানিনা জীবনে কি ভুল করলাম। আমি কি আসলে অপায়া। আমাকে দিয়ে কি কিছুই হবে না । পুরানো একটা বিল্ডিং এ তার বাসা। ঘরের দেওয়ালে শেওলা পড়ে আছে । জানালার বাইরে দিক কিছু গাড়ি আর রিকশার শব্দ আসছে। সিগারেট টা টেনে টেবিলের কাছে আসতেই আচমকা হয়ে দাড়িয়ে গেল। দেওয়ালে একটা ছবি টাঙ্গানো ছিল। অনেক ময়লা পড়ে গেছে। সেইদিক তাকাতেই সজলের পুরানো স্মৃতি মনে পড়ল।

এইতো ২০১২ সালের কথা। সজলের জীবনে তার সবকিছুই ছিল । কিন্তু একপলকেই সব কিছুই যেন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। ২০০৯ সালের গরমের শেষ দিকে তার সাথে শিমুর প্রেম হয়। ২০১০ সালে্র কথা তারা বিয়ে করে। প্রেম করে বিয়ে হয়েছে বলে বাসার কেউ মেনে নেইনি। তারা বিয়ে করে একটা ছোট সংসার করে । খুব ভালই দিন কাটছিল। কিন্তু সুখ সবার কপালে সবসময় থাকে না। ২০১২ সালে গরমের শেষ দিকে শিমুর ক্যান্সাররে মারা যায়। সেই সময় ও অনেক গরম ছিল।

Collected by : Madman

আগুন্তক

1507379-6

কাল রাতে মনটা খুব খুব খারাপ ছিল। বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম। একা একা আর ভালই লাগে না। এইটা কোন জীবন হল। একেবারে একা। হঠাৎ ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়াতে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। এমনিতেই আমার অনেক ভয়। এরপর আজকে বাসায় একা। কি যে করি। তারপর মোমবাতিটা কোথায় তাও বলতে পারিনা। বারান্দায় দাড়িয়ে দেখছি যদি কেউ যায় তাকে ডেকে আমার ঘরে মোমবাতিটা জ্বালাবো। একা একা ভয় করছে। হঠাৎ রাস্তা দিয়ে টর্চ লাইট হাতে কে যেন যাচ্ছে। আমি জোর গলায় ডাকলাম লোকটাকে। এই যে শুনছেন আমাকে একটু সাহায্য করে যান। আগুন্তক লোকটা এইদিক ওইদিক তাকাচ্ছে। আমি বললাম এই আপানার পিছন দিকে বাড়িটা। আমাকে একটু সাহায্য করেন। লোকটা আসাতে অনেক ভালোই হল। আমি অন্ধকারে কোন রকম নেমে এলাম। দরজাটা খুলতেই কেমন যেন বিকট মরা মানুষের গন্ধ পেলাম। ভাবলাম এ আবার কি হল। আমি আগুন্তককে বললাম আপনার টর্চ লাইটটা একটু জ্বালান। আমার মোমবাতিটা খুজে পাচ্ছি না। লোকটা আমার কথা মত জ্বালালও। দেখি ড্রং রুমের টেবিলের উপর রাখা। আমি পকেট থেকে দিয়াশলাইটা বের করে জ্বালানো মাত্র আগুন্তকের মুখের দিক নিতেই দেখি আগুন্তকটা আর কেউ না সে আমার আজকে সকালে মারা যাওয়া শশুর। আমি তাকে দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরে দেখি আমার স্ত্রী আমার পাশে বসে কাঁদছে। আমি বললাম কি হয়েছে সে বলে, কাল তোমাকে এই অবস্থা দেখে আমি খুব ভয় আর চিন্তায় ছিলাম। আমি আর কিছুই বলিনি কালকের ব্যাপারটা।

Collected by : Madman

#stranger #story #paranormal #night

মনের কথা

20180602_015427-COLLAGE

বহুদিন দিয়াশলাই কাঠি জ্বালানো হয় না। গ্যাসলাইট দিয়ে জ্বালানো সিগারেটে সেই গন্ধটা পাওয়া যায় না। এখন আর আগের মত মেসেঞ্জারে বসি না। কারণ তুমি তো আর নক করো না। কবিতা লেখাটা বোধহয় বন্ধ হয়ে গেল। পুরানো কথাগুলায় এখন মরিচা ধরেছে। প্রতিদিন মেট্রোতে দেখি আমার প্রতিচ্ছবি। কেই কাঁদে বা কেই বা হাসে। আমার জীবনটা যেন এই মেট্রোর মত। থামে আবার চলে। আর বয়ে বেড়াই নতুন কাহিনী। আমিতো কবি নই বা লেখক নই

আমি সিনেমার ডিকশনারি চ্যাপলিন নই। আমি কে? প্রশ্নের উত্তরটা হারিয়ে গেছে। শুধু এতটুকু জানি যে, আমি এক ঈশ্বর বাদী মানুষ। সারাদিন খেটে খাওয়া মানুষের ভীরে, নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেছি। তাদের খেটে আসা ঘামের গন্ধে, খুজে পেয়েছি বেচে থাকার উপায়।জীবনের গল্পটা এবার বুঝি শুরু। জানিনা এই গল্পের শেষ কোথায়। তবে এতটুকু জানি যে। এই গল্পের কোন রাজা রাণী নেই।

Collected by : Madman

বজ্রপাত

istockphoto-834255490-1024x1024

আজকাল সাথীর ভয়ে আমাকে ছাদে গিয়ে সিগারেট টানতে হয়। কি যে সমস্যা হয়েছে ? আমি সিগারেটটা ছাদে গিয়ে ধরাবো বলে উঠলাম। আজ হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। সিগারেটটা যেই ধরাতে যাব ওমনি বিকট ভাবে ব্জ্রপাতের আওয়াজে আমার সিগারেটটা পড়ে গেল। আমিও চমকে উঠলাম। হঠাৎ লানির কথা মনে পড়ল। লানি আমার কুকুরের নাম। আমার খুব ভালবাসার কুকুর। আমি ওকে রাস্তায় পেয়েছিলাম। আমি একজন সরকারী কর্মচারী। মাসে যা পাই আমার চলে যাই। সাথীর সাথে আমার এরেঞ্জ বিয়ে হয়েছে। আমার বিয়ের আগে আমি আসলে একটু ভবঘুরে ছিলাম। যাইহোক বছর পাঁচেক আগের কথা। সেইসময় আমি কেবল ইউনিভার্সিটি পাশ করে বের হয়েছি। আমি ভাবুক ছিলাম। বিভিন্ন জিনিস নিয়ে চিন্তা করতাম। আয় রুজি বলতে বাপের হোটেল। এইভাবে পাড় করলাম ১ বছর। একদিন সন্ধ্যা বেলা আমি আমার বাসার গলির ভিতর দিয়ে হাঁটতে ছিলাম। সেদিন অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল। ছাতি হাতে ছিল বলে বেশী একটা ভেজা লাগিনি। তা হাঁটতে হাঁটতে গলির মাথায় এসে দাঁড়ালাম যদি একটা রিকশা পাওয়া যাই। সেদিন আবার আমার ফিল্ম সোসাইটিতে ছবি দেখাবে বলে যাওয়া লাগবে। তাও আবার চার্লি চ্যাপলিনের দ্যা ডগস লাইফ। তাই যেতে হল। কারণ সিনেমা মানে আমার লাইফ। এটা ছাড়া আমার চলে না এমন অবস্থা হয়ে গেছে। তা আমি যে ভাবে হোক আমি পৌঁছাইলাম। সিনেমা দেখে বের হতে হতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। বের হয়ে দেখি রাস্তা ফাকা। কোন রিকশা বা গাড়িও নাই। কি করার ? তাই হেটে হেটে বাসায় যেতে হবে। অনেক বৃষ্টি। বের হয়ে পি, টি, আইয়ের মোড় ঘুরতে দেখি একটা কুকুরের বাচ্চা। অনেক সুন্দর দেখতে। ভিজে একেবারে করুন অবস্থা। ওকে দেখে আমার খুব খারাপ লাগল কিন্তু কি করার আমি হাটা শুরু করলাম। হাঁটছি আর মনের ভিতর কুকুরের জন্য মায়া লাগছিল। তাই বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছিলাম। ৪ বারের বার তাকাতে গিয়ে আমি অবাক। দেখি বাচ্চা কুকুরটা আমার পিছন লেগেছে। এ কি মহা জ্বালা। কি করি ? বাসায় নিলে তো আরেক সমস্যা। অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে মাথায় বুদ্ধি এলো ওকে লুকিয়ে ছাদের উপর রেখে আসা যাবে। আমি সেই প্লান মাফিক ওকে তুলে নিয়ে বাসার দিক গেলাম। চুপ করে ছাদের উপর উঠে গিয়ে ওকে কবুতরের খোপের পাশে রেখে আসলাম। পরেরদিন সকাল বেলা দেখি সে একা একা ছাদে দৌড়াদৌড়ি করছে। আমি সকালে সবার ঘুম ভাঙ্গার আগে ওর জন্য খাবার কিনে নিয়ে এসে ছিলাম। ছাদে সচারচার আমি ছাড়া কেউ যাই না । তাই ভাবলাম ও এইখানে ভাল থাকবে। এইভাবে দুইদিন গেলো। চিন্তা করলাম নাম কি দেওয়া যাই। নাম খুজে পাচ্ছিলাম না তাই লানি নামটা দিলাম। এর কোন মানে নেই। তা ওর সাথে আমার খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। বিকেলে ও কবুতরদের সাথে খেলা করত। আমি বেশীর ভাগ সময় ওর সাথে কাটাতাম। একদিন মা জিজ্ঞাসা করলো কি রে আজকাল বাইরে বের হইসনা কেন ? সারাদিন ছাদে থাকিস। কি হয়েছে ? আমি বললাম কই কিছু না। এমনি কারোর সাথে মিশতে বা ঘুরতে ভাল লাগে না। মা বলল চাকরি বাকরি কি করা লাগবে না। আমি বললাম ওটা দেখা যাবে সময় হোক। মাস ২ই কেটে গেল। বৃষ্টির শেষ সময়। আমি একদিন বিকেলে আমার একটা জরুরি কাজে বাইরে বের হতে হবে তাই ভাবলাম কাজ শেষ করে এসে লানি কে তার ঘরে ঢুকিয়ে দিব । ৩০ মিনিটের কাজ। এখনও সন্ধ্যা হতে দেরী আছে। আমি বের হয়ে গেলাম। এর ভিতরে মেঘের প্রচুর আওয়াজ হচ্ছে। আমি হালকা চিন্তায় ছিলাম লানিকে নিয়ে। ছোট বাচ্চা আবার ভয় না পাই। বের হয়ে গলির মাথায় একটা দোকানে গিয়ে দাঁড়ালাম রিকশার জন্য এমন সময় খুব বড় আকারে বজ্রপাত হল। এমন ভাবে আওয়াজটা হল যে আমার কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার মত। আমি তৎক্ষণাৎ লানির কথা চিন্তা এলো মাথায়। কারণ ও একা ছাদে। আমি দৌড়ে গেলাম বাসার দিকে। এমন দৌড় আমি আগে কখনও দিনি। এক দৌড়ে বাসায় ঢুকলাম। আম্মা বলছে এ তুই হাপাচ্ছিস কেন ? কি হয়েছে ? আর ছাদের দিকে যাচ্ছিস কেন ? আমি কারোর কথা কানে না দিয়ে উপরে উঠলাম। গিয়ে দেখি আমার প্রিয় লানিটা লাশ হয়ে ছাদের মাঝখানে পড়ে আছে। আমি খুব জরে চিৎকার দিয়ে ওইখানে জ্ঞান হারিয়ে পড়লাম। পরে জ্ঞান ফিরলে দেখি আম্মা আমার মাথার কাছে বসে আছে। সেই সময় সকাল হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম লানি কই ? আম্মা বলে ময়লার ভিতর লাশটা ফেলে দিয়ে এসেছে কাজের মহিলা। আমি বিছানার থেকে উঠে মাকে বললাম কোথায় সেটা। আম্মা রাগ করল। আমি চেচিয়ে কান্নার স্বরে বললাম কোথায় ফেলে দিয়ে এসেছ লানিকে। মা বলল ওই ময়লা ফেলার জায়গায়। আমি দৌড়ে গেলাম। ততক্ষন দেরী হয়ে গেছে ময়লা তুলার লোক তাকে নিয়ে গেছে। এরপর বেশ কিছুদিন জরে ভুগেছিলাম। এরপর আমি সব ছেড়ে দিয়ে চাকরি সংসার করা শুরু করলাম। জীবনটা অনেক বদলে গেছে। কিন্তু লানিকে ভুলতে পারিনি। আজ এই নিষ্ঠুর বজ্রপাতে আমাকে আবার লানির কথা বেশী মনে করে দিল।

Collected by : Madman

#dog #lover #sad #story

কোন এক শীতের সকাল

child

মা আমি আর পারছি না। এরা আমাকে অনেক ধরনের অত্যাচার করে, কেঁদে কেঁদে নাসরিন তার মা আমেনা বেগম কে ফোনে এ কথা গুলো বলে।

অভাবের সংসার কে বাচাতে ঢাকায় পাড়ি জমায় নাসরিন। বয়স ১৪ বছর। এক বাসায় তার কাজের কথা হয় বলে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে কিছু স্বপ্নের আশায়। কিন্তু যা সে স্বপ্ন দেখেছে তা যেন একেবারে মিথ্যা। চোখের পানি ফেলছে আর বারান্দায় দাড়িয়ে নাসরিন কাদছে তার মার সাথে কথা বলার সময়।

মা> কি করবি বল ? এই শীতের সময় আমি তোকে নিয়ে আসবো।

নাসরিন> তুমি তো সবসময় একই কথা বল। কিন্তু শীতের তো অনেক দেরী। এই নিয়ে ২ বছর হয়ে গেছে। দেখা করতে ও আসলে না কোনদিন।

মা> আমি বলছি তো আমি সত্যি এবার এসে তোকে নিয়ে যাব ।

এই বলে ফোনটা রেখে দিল আমেনা বেগম।

ওই যা রাত হয়েছে কাপড় টা ধুয়ে শুয়ে পড়, বাড়ির মালকিন বলল।

নাসরিন চলে গেলো তার কাজে।

দেখতে দেখতে সেই শীতের সময় হয়ে গেল। আমেনা বেগম সকাল বেলা দেখল তার ঘরের সামনে গাছের পাতা গুলো সব ঝড়ে পড়েছে। তখনি মনে পড়লো তার মেয়েকে আনার কথা। হঠাৎ পাশের বাসার থেকে ডাক এলো যে নাসরিনের বার্তা এসেছে। নাসরিন আর নেই। গতকাল রাতে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

আমেনা বেগম> বেচে গেলো মেয়েটা !

Collected by : Madman

#story #child #death #bangla