সাগরের শব্দে আমি ভেসে যেতে চাই
তোমার প্রিয় স্রোতের তরংগে আমি থাকতে চাই
তোমার লিখা কবিতা পড়ে আমি হারিয়ে যেতে চাই
ভালবাসাটা আজ শিখতে চাই তোমার ঠোটের স্পর্শ দিয়ে
আজ শুধু আমি কবি বা লেখক নই
তোমার ভালবাসার পাগল হতে চাই
একটি ফটোগ্রাফের আত্মকাহিনী
অনেকদিন হল বাইরে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে না। এইদিকে মাথায় কোন গল্প আসছে না। গতবার তো চিটাগং এর লিখা হল। এবার জানিনা কি লিখব। এই ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। মাগরিবের নামায পড়ে বারান্দায় বসে ছিলাম। রহমান ভাইকে বললাম যে এক কাপ চা দিতে। এই বলে বসে আছি। চা টা ও চলে এলো। কিছুই ভাল লাগছে না। এবার গল্পটা জমা না দিলে আরেক বিপদ। একটা সিগারেট ধরিয়ে কেবল চায়ে চুমুক দিব, ওমনি মোবাইলে রিং বেজে উঠে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি তানিন ফোন দিছে।
আমি> হ্যালো , তানিন কি অবস্থা ? কেমন আছিস ?
তানিন> এই তো ভাই, ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন ?
আমি> আছি ভাল আছি। তারপর কোথায় এখন ?
তানিন> এই তো ভাই কক্সবাজার ।
আমি> ঐখানে কেন ? আবার কক্সবাজার গেলি।
তানিন> ভাই চাকরি পেলাম। আমার পোস্টিং হয়েছে। আর বাসাটা সমুদ্রের ধারে।
আমি> ও। তা হলে তো ভাল দিন কাটাচ্ছ।
তানিন> হুম। তা আপনি পারলে একবার ঘুরে যান। সেই ঘটনার পর থেকে আর তো দেখা হয়নি।
আমি> দেখি। আসলে অবশ্য জানাব।
তানিন> হাতে তো এখন আমার কোন কাজ নেই। এক সপ্তাহর জন্য আমি আপনাকে সময় দিতে পারি। আসুন একবার ঘুরে যান। মজা করা যাবে । অনেক দিন দেখা নেই।
আমি> হুম। তা ঠিক বলেছিস। আচ্ছা আমি আসবো। আগামীকাল তোকে কল দিয়ে জানাব।
তানিন> ঠিক আছে ভাইয়া। অবশ্যই জানাবা।
ফোনটা রেখে দিয়ে দেখি জলন্ত সিগারেটটা কখন পুড়ে ছাই হয়ে গেলো জানলামি না। আরেকটা সিগারেট ধরালাম। টানার পর একটা অন্যরকম শান্তি পেলাম। কারণ আমার মাথায় যে এবার গল্প এলো। কারণ তানিনের একটা ব্যাপার নিয়ে। তার একটা ঘটনা আসলে আমার কাছে ভুলে যাওয়ায় কঠিন। বারান্দায় বসে আছি। দক্ষিনের হাওয়া হচ্ছে। আজকে সেই রকম একটা পরিবেশে তানিনের সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।
২০১১ সালের কথা। তানিন তখন ঢাকায়। বিএসসি নিয়ে পড়াশুনা করছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে পড়াশুনা করছিল। আমরা অনেক আড্ডা দিতাম টিএসসি চত্বরে। জুলাই মাসে মাঝামাঝি সময়, তানিনের সাথে ফেসবুকে তানিয়া নামে একটা মেয়ের পরিচয় হয়। সেটাও ও অস্বাভাবিক ভাবে। আমি ওকে একটা ছবি তুলে দিছিলাম। চলন্ত ট্রেনের দরজার সামনে, সেই ছবির কারণে তানিনের জীবনে অনেক সমস্যা হয়েছিল। ঐ ছবিটা সেই মেয়ের অনেক ভাল লেগে যাই। সেই থেকে কথা এরপর ট্র্যাজেডি।
২০১১ সালে জুলাইয়ের ৪ তারিখ। সন্ধ্যা বেলা তানিন বারান্দায় বসে মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করছিল। হঠাৎ একটা নোটিফিকেশন এলো। তানিন খুলে দেখে তানিয়া নামে একটা মেয়ে তার ঐ ছবিটাতে কমেন্ট করেছে। তানিন প্রথমে ভাবছিল তার বান্ধবী তানিয়া হবে। কিন্তু পর মুহূর্তে একটা মেসেজ আসে। তখন সে বুঝতে পারে এটা ওর বান্ধবী তানিয়া না। আরেকজন। এরপর তাদের কথা শুরু হয়। মেয়েটার কাছে তানিনের এই ছবিটা অনেক ভাল লাগে। সেটা নিয়ে তাদের কথা চলে। এইভাবে তাদের ভিতর অনেক দিন কথা চলতে থাকে। তবে প্রথম দিকে কোন প্রেম আলাপ হত না। মজার ঘটনা ঘটে ডিসেম্বরের ৩ তারিখে। সেই রাত ছিল তানিনের অনেক আনন্দময় রাত। রাত তখন ১১ টা। তানিনের ফোনে রিং আসে। তানিন কল ধরতেই,
তানিয়া> কান্নার সুরে বলছে, তানিন তোমাকে একটা কথা বলব ?
তানিন> হা, বল। আর তুমি কাঁদছ কেন ?
তানিয়া> আমি না তোমায় ভালবেসে ফেলছি।
তানিন এই কথা শুনে হা হয়ে ছিল। আর মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
তানিন> আমি ও তোমাকে ভালবেসে ফেলছি। কিন্তু সাহস হয় নাই বলার।
তানিয়া এই কথা শুনে মুচকি হাসি দিল একটা।
এরপর এদের ভিতর চিঠি আদান প্রদান হত। অনেক গভীর ভালবাসা ছিল তাদের। কিন্তু সমস্যা তাদের এতদিন সামনাসামনি দেখা হয় নাই। এইদিকে চিঠি আদানপ্রদান আর ফোনে যা কথা হত।
২০১২ সালের জুনের শেষের দিকে কথা,
তানিয়া> আচ্ছা এবার দেখা করা কি যায় না। তুমি কি আসতে পারবা।
তানিন> তা করা যাই। তাহলে জুলাইয়ের ৪ তারিখে আসি। আমাদের ১ বছর পূর্ণ হচ্ছে।
তানিয়া> তা করা যায়।
তানিয়া থাকতো চিটাগং এর অলংকার মোড়ে । আর তানিন থাকত ঢাকায়। তাই তারা প্লানিং করলো তারা দুজনে কক্সবাজার যাবে। ঐখানে দেখা করবে। তানিন সেই সবুজ শার্ট এর উপর কালো স্টাইপ দেওয়া আর তানিয়া শাড়ী।
জুলাইয়ের ৪ তারিখে তাদের দেখা হয়। সমুদ্রের পাড়ে। তানিয়া তাকে দেখে যে হাসিটা দিছিল তানিন আমাকে বলেছিল সেই হাসির ভিতর অন্য রকম একটা অনুভুতি পেয়েছিলো যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। মনে হয়েছিলো যে ও আমার হাজার বছর ধরে চেনা। যার জন্য এতটা বছর আমি এই পথে দাড়িয়ে আছি। সেইদিন সারা বিকেল দুজনে খালি পায়ে হেঁটেছিল সারা সৈকত। খুব আনন্দ করেছিল। সন্ধ্যার আলো নিভানোর আগেই তানিয়া তানিনের মুখটা ধরে ঠোটে একটা চুমু খেলো। সেই চুমুর যে কি আনন্দ সেইদিন তানিন বুঝেছিল। এরপর রাতে বাস ধরে তানিন রওনা দিল। তানিয়া ও চলে গেলো। এরপর তাদের মাসে একবার না একবার দেখা হত।
নভেম্বর মাসের কথা। ৯ বা ১০ তারিখ হবে। হঠাৎ তানিনের মোবাইলে কল আসে। দেখে তানিয়া। কলটা ধরতেই
তানিয়া> কোথায় তুমি ?
তানিন> এই তো বাসায়। কেন ?
তানিয়া> কালকের ভিতর আমার সাথে দেখা করবা।
তানিন> কি হয়েছে ?
তানিয়া> খুব জরুরী দরকার।
তানিন> আচ্ছা দেখছি কি করা যাই।
তানিন খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। আমার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ঐ রাতে রওনা দিল। নভেম্বর মাসে ১১ তারিখে। আর ঐদিনটা ছিল তার শেষ দেখা তানিয়ার সাথে। সেইদিনটা অলংকার মোড়ে অনেক জ্যাম ছিল। পোঁছাইতে সন্ধ্যা হয়ে গেছিল। তানিয়া বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিল। বাস থেকে নেমেই দেখে তানিয়া দাড়িয়ে আছে। তানিয়া ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো একটা ফাকা জায়গায়,
তানিয়া> বাসার থেকে আমার বিয়ে ঠিক করেছে ?
তানিন > কবে ?
তানিয়া> ছেলে দেখা শুরু হয়েছে। আমি তোমার কথা বলেছি।
তানিন> তারা কি বলেছে ?
তানিয়া> তারা বলেছে যে, তোমার সাথে আমার বিয়ে দিবে, তবে একটা শর্তে
তানিন> কি শর্ত ?
তানিয়া> তারা বলছে আমাকে বিয়ে করতে গেলে তারা যে চাকরীটা দিবে ওটা করা লাগবে।
তানিন> মানে ? কি বলছ ? আমি নিজেরটা খুজে নিতে পারবো। কারোর সাহায্য বা ডান দরকার নাই।
তানিয়া> বাবু এই কথা বলে না। আমি তোমায় অনেক ভালবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া কারোর কাছে সুখী হটে পারবো না। তোমার ভাল চিন্তা করে আমি তাদের কে বলে এসেছি। আর এখন তুমি রাজি না হলে আমার কথার সম্মান থাকলো কই
তানিন> না , আমি পারবো না। এই চাকরি করতে।
তানিয়া তানিনের হাত ধরে অনেক অনুরোধ করল। কিন্তু তানিন কিছুতেই রাজি হল না। তানিয়া ওকে ঠোটে একটা চুমু দিয়ে বলল,
এই দেখা আমাদের শেষ দেখা। আর কোনদিন দেখা হবে না। আর কোনদিন দেখা করার চেষ্টা কর না। এইবলে তানিয়া চলে গেলো। আর তানিন একভাবে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কিছুই বলতে পারলো না।
এইভাবে কেটে গেলো ৩ বছর। অনেক মেসেজ, কল দিলো। কিন্তু তানিয়া কল ধরে না। আর মেসেজের কোন উত্তর দেয় না। নাম্বারটা ও বন্ধ। ২০১৫ সালে জুলাইয়ের ৪ তারিখে একটা অচেনা নাম্বারে কল এল।
তানিন> হ্যালো কে ?
তানিয়া> কেন চিনতে পারছ না। আমি তানিয়া।
তানিন> কেমন আছো ?
তানিয়া> তোমাকে ছাড়া যেমন থাকি।
তানিন> ও। তা এতদিন পর মনে পড়লো ?
তানিয়া> হুম। কারণ আজ জুলায়ের ৪ তারিখ।
তানিন> মনে আছে এই দিনের কথা।
তানিয়া> আজ আমার একটা মেয়ে জন্ম নিলো।
তানিন> খুব ভাল সংবাদ। অনেক সুখে আছো তাই না।
তানিয়া> না একটু ঝামেলায় আছি
তানিন> সংসার জীবনে অনেক ঝামেলা আসবে, এখন তোমার একটা বাচ্চা হয়েছে। তার দিক তাকিয়ে সব ঝামেলা মেনে নিয়ে টিকে থাকো।
তানিয়া> বাহ, তোমার অনেক জ্ঞান হয়েছে।
তানিয়া আবার একটা মুচকি হাসি দিল। আর বলল, আমি তোমার দেওয়া সব মেসেজ পড়তাম।
তানিন এই কথা শুনার পর আর কোন কিছুই বলল না। শুধু বলল ভাল থেকো।
সেই রাতে তানিন বাসে করে কক্সবাজার চলে গেলো। আর তার কাছে তানিয়ার দেওয়া সব চিঠি গুলোকে সেই সমুদ্রের পানিতে ভাসিয়ে দিলো।
এরপর আর কি ? তানিনের সাথে আমার দেখা হয়েছিল ২০১৫ এর ডিসেম্বর মাসে। আর ২ বছর পর হবে দেখা। আসলে দিনগুলো কেমন করে পাড় হয়ে যায় বোঝা যায় না।
কাল্পনিক সব
আর কিছুই ভাল লাগছে না। এটা কেমন জীবন। এত
তাড়াতাড়ি সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে এটা ভাবতে পারিনি। কেন এমন হল আমার সাথে। আমি আজ
পর্যন্ত কাউকে কষ্ট দিনি। কিন্তু আজ আমার এই অবাস্থা কেন হল। বিধাতার এ কি খেলা।
জীবনের বাস্তবতার কাছে আমি হেরে গেলাম। কাল ডাক্তার বলেছে আমার হাতে আর বেশী সময়
নেই। কারণ আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে যেটা একেবারে লাস্ট স্টেজে। একা একা এইসব ভাবছি
আর হাঁটছি। প্রচণ্ড গরম পড়েছে এবার। লন্ডনে এবার অনেক গরম। আমি লন্ডন ব্রিজের পাশ
দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ আমার ক্লান্ত লাগছিল বলে আমি একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম। সেই সময় গরম অনেক পড়েছিল। আমার ঘাড়ের ব্যাগটা নামিয়ে পানি পান করে একটা সিগারেট ধরালাম। টানতে টানতে অনেক কিছু চিন্তা করছিলাম। ভাবছিলাম কি করব? রাস্তায় অনেক মানুষের ভীড়। হঠাৎ আমার বামহাতের পাশে একটা সাদা কাগজের পৃষ্ঠা পেলাম। আমি ভাবলাম ফালতু কাগজ। তাই হাতটা সরিয়ে নিলাম। অনেকক্ষন বসে ছিলাম।হাতে কোন কাজও ছিল না। ভাবলাম কি করি। তারপর কি মনে করে আমি কাগজটা হাতে নিলাম। দেখি কাগজে কি লিখা। কাগজটা চোখের সামনে নিতেই দেখি একটা চিঠি লেখা।
প্রিয় ইশরাত
তোমার কি মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা? ২০১১ সালে খুলনায় তোমাদের বাসায়। প্রথম দেখতে যাওয়া। আমার পরিবার তোমাকে দেখতে এসেছিল। আমিও এসেছিলাম। তুমি তো লজ্জায় আমার সামনে বসে ছিলে। আমি না তোমায় ছবিতে যা দেখেছিলাম তুমি তার থেকে খুব সুন্দর। যখন তোমাকে আর আমাকে আলাদা ঘরে আলাপ করার জন্য বলেছিল সেই সময় তোমার কন্ঠে আমার মনের ভিতরটা সত্যি কেমন যে করেছিল তা বুঝাতে পারব না। তারপর আমার সাথে আর দেখা হয় বিয়ের দিন। এর ভিতর কোন কথা হয়নি। আমি এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। বিয়ের রাতে তোমাকে কি বলবো ভেবে পারছিলাম না। কিন্তু তুমিও তো চুপ করে ছিলে। সবচেয়ে কষ্ট লেগেছিল তোমার কাছে যেয়ে। যখনি তোমাকে ছুতে গেলাম তুমি নিষেধ করে বসলে। আমি থমকা হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তুমি বললে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো। আমি তোমায় কিছুই বলিনি। এরপর আমারা আলাদা ভাবে ঘুমাইতাম কাউকে বুঝতে দিনি। তুমি নিষেধ করেছো কাউকে জানাইতে আজ ২ বছর হয়ে গেল আমি কাউকে সত্যটা জানাইনি। তোমার যখন যা লেগেছে আমি তাই এনে দিয়েছি। কখনও না বলিনি। আমি যখন তোমায় নিয়ে লন্ডন আসতে চেয়েছি তুমি রাজি হয়ে গেলে। ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভালবেসে ফেলছও। পরে জানতে পেলাম তুমি যাকে ভালবাসো সে লন্ডনে থাকে। যখন এলাম লন্ডনে তোমার প্রেমিক কে খুজতে বের হলে। আমার কথা একেবারে মনে করনি। বাসায় ফোন দিয়ে প্রত্যেকদিন মিথ্যা বলা লাগছে। একদিন তোমার কাছে বকুনি শুনে অনেক কেদেছিলাম। আজ আমাদের ২য় বিয়ে বার্ষিকী। আজ তুমিও চলে যাবে। কারণ তোমার প্রেমিক কে খুজে পেয়েছ। আজ তোমার আনন্দের দিন। ভালই হয়েছে। তুমিও বিদায় নিচ্ছ তোমার ভালবাসার সাথে আর আমিও বিদায় নিচ্ছি না ফেরার দেশে। তোমার কাছে আর ঝামেলা হয়ে থাকবো না । যদি তুমি আমায় প্রথমদিন বলে দিতে পারতে, তা হলে মরে যাওয়ার আগে এত বেশি কষ্ট পেতে হত না। আজ একটা প্রশ্নের জবাব দেও তুমি কি আমায় কোনদিন ভালবেসে ছিলা ?
আমি চিঠিটা পড়ে নিজেই অবাক। এইগুলা আমি লিখেছি। সন্ধ্যা হয়ে আসলো। চিঠিটা বেঞ্চের উপর রেখে আসলাম। বাসায় কলিং বেল টিপলেই ইশরাত দরজাটা খুলে দিল। সে শাড়ি পড়া আর মাথায় ফুলের খোপা বাধা। আজ অনেক সুন্দর লাগছে ওকে । ভিতরে ঢুকতেই পরিচয় হয় এক অচেনা অতিথির সাথে।
অচেনা লোক > হাই আমি রাজু
আমি> হ্যালো আমি ফারুখ হোসেন।
প্লিজ বসুন………………।
লিখা
জানালার পাশে একা একা লিখা বসে আছে। সন্ধ্যার আযান দিচ্ছে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। লিখা জানালা দিয়ে রাস্তার মানুষগুলোর হেটে যাওয়া দেখছে। কিছুই ভাল লাগছে না। মনটা আজ অনেক খারাপ। আবার ভালও লাগছে। কারণ লিখা মা হতে চলেছে। আজ এই সংবাদটা ডাক্তার তাকে দিয়েছে। আজ আরাফকে এই খুশির সংবাদটা দিবে। এদিকে আরাফের জন্য অনেক চিন্তা হচ্ছে তার। বিকেলে একটা সংবাদে তার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। দেশের অবস্থা অনেক খারাপ। লিখা জানালা থেকে বাইরে তাকিয়ে আছে আরাফের জন্য। রাস্তায় কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ছাড়া আর কিছুই আসছে না।
ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা ৭টা বেজে গেছে। এখনও আসেনাই আরাফ। লিখা খুব খুব অস্থির ভাবে হাঁটাহাঁটি করছে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ পেল। লিখা দৌড় দিয়ে দরজা খুলতে গেল। ভাবলও আরাফ এসেছে। দরজা খুলতেই দেখে,
শান্ত> স্যার আসেনি এখনও ?
লিখা> না, আমি তার জন্য অনেক চিন্তায় আছি।
শান্ত> কি বলেন ? আমরা তো বিকেলে আগোরতলায় আগামীকালকের আন্দোলনের সব কথাবার্তা ফাইনাল করে সবাই চলে গেলাম। কিন্তু স্যার এখনও আসেনি ? আমাকে বলল সন্ধ্যায় বাসায় আসতে আরও কথা আছে বলে।
লিখা> কিন্তু সে তো এখনও আসেনি। খুব চিন্তা হচ্ছে শান্ত একটু খোজ খবর নেও তো কি হল আবার ওনার।
শান্ত> আপনি চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি খোজ নিচ্ছি ।
এই বলে শান্ত চলে গেল। লিখার মনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল। কিছুতে মনকে মানাতে পারছে না। সে একবার বারান্দায় যায় আবার ঘরে এসে ঘড়ী দেখে।
রাত ১০ টা বেজে গেছে, আরাফ এখনও আসলো না। লিখার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হঠাৎ কলিংবেল বাজলো। লিখা দরজাটা খুলতেই দেখে আরাফ। সারা কাপড়ে রক্তের দাগ। লিখা চেচিয়ে উঠলো।
লিখা> কি হয়েছে তোমার ?
আরাফ> আরে জানু আগে ভিতরে তো ঢুকতে দেও তারপর বলছি
লিখা> <কেদে কেঁদে জিজ্ঞাসা করছে> আগে বল ?
আরাফ> আর বইলো না, সন্ধ্যায় ইউনিভারসিটিতে পুলিশের সাথে কিছু ছাত্রের মারামারি হয়েছে। সেটা ঠেকাতে গিয়ে ছাত্রদের রক্ত লাগছে। এখন ভিতরে ঢুকতে দেও। আমাকে পরিস্কার হতে হবে তো।
আরাফ ভিতরে ঢুকলও। লিখা দরজাটা লাগাতেই আরাফ তার হাতটা টেনে ধরে লিখার ঠোটে একটা চুমু দিয়ে বলল খুব চিন্তা হচ্ছে বুঝি আমার জানু।
লিখা আরাফকে ধাক্কা দিয়ে একটু রাগান্বিত স্বরে বলল, চিন্তা হয়না বুঝি তোমায় নিয়ে। যাও এখন পরিস্কার হয়ে এসো। খাবার দিচ্ছি।
আরাফ বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলও লিখা নামায পড়ছে। আরাফ অন্য ঘরে গিয়ে রেডিও টা ছেড়ে হালকা শব্দে সংবাদ শুনছে।
লিখা নামায শেষ করে আরাফকে ডাকলও।
আরাফ আর লিখা দুইজনে খাবার টেবিলে বসা। ঘরে ইলেকট্রিক নাই। মোমের আলোতে তারা খাওয়া দাওয়া করছে। তাদের ছায়া ঘরের দেওয়ালে এসে পড়ছে। খাওয়ার ভিতরে লিখা লক্ষ্য করলো আরাফের দিকে। সে একমনে কি যেন চিন্তা করছে,
লিখা> কি হয়েছে তোমার ?
আরাফ চমকিয়ে উত্তর দিল
আরাফ> কিছু না ।
লিখা> তা হলে কি চিন্তা করছো খাওয়া শেষ কর।
দুজনে নিরবে খাওয়া দাওয়া করছে। আশেপাশে ঝি ঝি পোকার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।
রাত ১২তা টা বেজে গেছে। আরাফ বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছে। আর এক মনে কি যে চিন্তা করছে তা লিখা বুঝতে পারছে না। কারণ লিখা অনেকক্ষন দাড়িয়ে ছিল, আরাফ সেটা টের পাইনি।
লিখা> আরাফ কি হয়েছে তোমার তুমি এমন চুপ হয়ে গেছ কেন ?
আরাফ> তুমি জানোই সব। কাল ভাষা নিয়ে আমাদের সব ছাত্ররা রাস্তায় নামবে। দেশের অবস্থা অনেক খারাপ। এমন সময় তাদের নামাট্যাঁ আমার কাছে ভয় লাগছে। আর তাদের সাথে আমাদের সবার থাকা উচিত।
লিখা> এখন তাদের কে বুঝিয়ে বল।
আরাফ> এখন সেটা সম্ভব না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই আন্দোলন দিয়েই আমাদের দাবী অর্জন করতে হবে।
লিখা> এখন অনেক রাত হয়েছে। ঘুমাতে চলো।
আরাফ আর লিখা বিছানায় শুয়া। আরাফের চোখে ঘুম নাই। সারারাত জেগে আছে। সিগারেটের পর সিগারেট ধরিয়ে যাচ্ছে।
ফজরে আযান শোনা যাচ্ছে। আরাফ তখনও জাগনো। লিখা নামাযটা পড়ে আরাফকে চা বানিয়ে দিল। আরাফ চা টা পান করে, কালো প্যান্ট আর সাধা কালো স্টাইপ দেওয়া শার্ট পড়ে নিল। লিখা এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করলো কোথায় যাচ্ছ।
আরাফ কিছুই বলল না। শুধু লিখার ঠোটে একটা চুমু দিয়ে হাসি মুখে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
লিখা দরজার কাছে দাড়িয়ে ওর যাওয়া দেখল। এইভাবে ৪০ টা বছর লিখা তার স্বামী আরাফের জন্য পথ চেয়ে বসে রইল। আরাফ আর আসলো না। তার একটাই দুঃখ যে আরাফকে সে কখনও জানাতে পারিনি যে সে বাবা হতে চলেছে।
কবে আসবে সেদিন
ReplyForward
|
রক্ত চাই রক্ত চাই
প্যারিসের শেষ চিঠি
কলিং বেলের শব্দে মিমির হাত থেকে কাপটা পড়ে ভেঙ্গে গেল।
মিমি> ধ্যাত এই সময় আবার কে এলো।
দরজাটা খুলে দেখে পিয়ন দাঁড়ানো।
মিমি> একটু বিরক্তি ভাবে বলল কি?
পিয়ন> নুসরাত জাহান মিমি আছে কি?
মিমি> আমি। বলুন
পিয়ন> আপনার নামে একটা চিঠি এসেছে। এই নিন।
মনে মনে মিমি বলল আমার নামে চিঠি কে পাঠালো
মিমি > কোথার থেকে চিঠি ?
পিয়ন> বিদেশ থেকে
মিমি চিঠিটা পিয়নের কাছ থেকে নিয়ে ঘরে চলে এলো। চিঠিটা ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে রান্না ঘরে চলে গেল। সারাদিন কাজ শেষ করে বিকেল বেলা বারান্দায় চেয়ারে বসে চা পান করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়লো চিঠিটার কথা। চায়ের কাপটা রেখে দৌড় দিয়ে চিঠিটা আনতে গেল।
সাদা খামে মোড়ানো চিঠিটা। চিঠির উপরে ঠিকানা দেখে বুঝলো এটা প্যারিস থেকে আসা। মিমি ভাবলও কে? ও চিঠিটা খুলল,
প্রিয় জানুবানু,
কেমন আছো ? চিঠিটা জানিনা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা। যদি তুমি চিঠিটা পাও আমি ততক্ষন এই দুনিয়াতে থাকবো না। আমি জানি তুমি আমার উপর অনেক অভিমান করে আছো। কিন্তু আমি তোমাকে সবসময় ভালবেসে গেছি। আমি কি এমন দোষ করেছি যে তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেছ। যার কারনে মনে হয় আজ আমার এই অবস্তা। শুনেছি তোমার নাকি অনেক বনেদী ঘরে ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে। অনেক সুখে দিন কাটাচ্ছো। আজ না প্যারিসে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল তোমার প্রিয় তুষার পাত হয়েছিল। আমি সেই তুষার পাতের সাথে তোমায় নিয়ে অনেক কথা বলেছি। প্যারিসের তুষার পাতে তোমার প্রিয় ভালবাসার শহরটা সাদা হয়ে গিয়েছিল। আমি অনেক অনেক অনেক মিস করেছি গতকাল তোমায়। আমার তো ঠাণ্ডা লাগানো নিষেধ। ডাক্তার বলেছিল ঠাণ্ডা লাগালে আমার পরিস্থিথি অনেক খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু কি করবো বল আমি তো গতকালের তুষার পাতকে তুমি ভেবে সারারাত জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম। সকালে উঠে দেখি সারা বরফের রং লাল হয়ে গিয়েছে। তার কিছুক্ষন পর বৃষ্টি হয়েছিল। সেই বৃষ্টিতে সব লাল রং মুছে গেছে। কারণ তুমি তো লাল রং পছন্দ করো না। তাই তোমার সুর বৃষ্টি সেটাকে ধুয়ে দিয়েছে। জানু তোমাকে আমি খুব মিস করছি। আজ তোমার আইফেল টাওয়ারটায় সন্ধ্যার বাতি দিতে ভুলে গেছে। আজ তুমিও নাই তাই প্যারিসে মনে হয় শোখের তাপ হচ্ছে। আমি তোমার প্রিয় বারান্দায় তোমার দেওয়া ভালবাসার হাওয়া দিয়ে তোমাকে লিখছি আমার জীবনের শেষ চিঠি। আমি গত এক বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছি। কিভাবে বেচে আছি তা বলতে পারবো না। মনে হয় তোমার ভালবাসার কারণে। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আমার । ভালও থেকো।
ইতি তোমার
পাগল।
মিমি কিছুক্ষন থমকে গেল। হাত থেকে চায়ের কাপটা পড়ে গেল। আর তার চোখ থেকে পানি পড়লো। সেই সময় ঝড়ো বাতাসে হাত থেকে চিঠিটা উড়ে গেল রাস্তায় গিয়ে পড়লো। আর হালকা বৃষ্টিতে সেই চিঠিটা ভিজতে লাগলো। আর মিমি বারান্দায় স্থির ভাবে বসে ছিল আর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকলো।
খুন
একদা আমাদের এক বন্ধু ছিল। নাম ছিল বনি। একেবারে হাবাগবা। তবে ওর মনটা অনেক নরম। মানে ও খুব সরল সহজ মানুষ। একদিন সন্ধে সময় আমরা কয়েকজন মিলে রাস্তায় হাটছিলাম। ওকে নিয়ে আমরা খুব মজা করতাম। সেদিনও আমরা অনেক ক্ষেপিয়েছিলাম ওর বউকে নিয়ে। আমরা যে রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম সেই রাস্তায় ফুটপাতে অনেক মেয়ে ছেলেরা বসে ছিল। সবাই জোড়াই জোড়াই বসে ছিল। আমরা ওকে বলছিলাম দেখিস তোর বউ থাকতে পারে। বনি দেখি চুপ হয়ে ছিল। কিছু দূর যেতেই পিছন ফিরে দেখি বনি নাই। তাকে কল করা হল কিন্তু কল ধরল না। ভাবলাম সে মনে হয় রাগ করে চলে গেছে। পরেরদিন সকালে চা টা নিয়ে বারান্দায় বসে পেপারটা খুললাম। খুলে দেখি একটা খুনের সংবাদ। পরকীয়া জের ধরে স্ত্রী কে খুন। ছবিটা ও চেনা চেনা লাগলো। দেখি বনির ছবি। গতকাল রাতে সে তার স্ত্রী কে খুন করেছে।
পরে জানা গেল ওই রোডে তার স্ত্রী একজনের সাথে ছিল।
লাশের ঘর
২০০৫ সালের কথা, আমি তখন একটা পুরানো বইয়ের দোকানে কাজ করতাম। আমার আবার বই পড়া খুব শখ ছিল। যখন সময় পেতাম তখন দুই একটা বই বাসায় নিয়ে পড়া হতো। আমাদের দোকানে বই বেশী আসতো বছরের শেষের দিকে। সেই সময় খুব ব্যাস্ত থাকা হতো। ডিসেম্বরের শেষের দিকে, একদিন আমি বই গুলোকে শেল্ফে সাজাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার হাতের থেকে একটা বই নিচে পড়ে গেলো। আমি সেটা তুলতে গিয়ে দেখি এটা বই না এটা একটা ডাইরি। পেজগুলো খুলে দেখি অনেক কিছু লেখা। মনের ভিতর একটা আনন্দ লাগলো। কারণ ডাইরিতে অনেক অসাধারণ গল্প থাকে। ভাবলাম এটাকে আজকে নিয়ে গিয়ে পড়বো। হাজার হোক ডাইরি। ডাইরি পড়তে আসলে মজা আছে। রাতে বাসায় ফেরার পথে ডাইরিটা নিয়ে ফিরলাম। বাসা বলতে একটা রুম নিয়ে থাকি আমি। বাসাটা আমার চিলেকোঠা ছিল। চারতলার উপর বাসাটা। একাই থাকি। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় হেলান দিলাম। জানালার পাশে বিছানাটা। বাইরে দখিণার বাতাস এই জানালা দিয়ে আসে। কি যে মজা লাগে তা বলার বাইরে। তা বছানায় হেলান দিয়ে একটা সিগারেট টানতে লাগলাম। আর মনের ভিতরে এক ধরনের ফুর্তি কাজ করছে। কারণ কাল ছুটি এরপর ডাইরি পড়বো আজ রাতে। সিগারেট শেষ করে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে ডাইরিটা খুললাম। কয়েক পেজ পড়তে থাকলাম কিন্তু কোন মজাই পাচ্ছিনা। মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। কোন ভালো কিছুই পেলাম না। সেই এক ধরনের কথা বার বার এলো। যেমন ছিল, আমি এই খাবার খেলাম, আমি আজকে এই করলাম ইত্যাদি। ঘড়ীর দিক তাকিয়ে দেখি প্রায় ১ টা বাজতে গেলো। এই দিকে ঘুম আসে না। কি করি ? বেশ কয়েকটা পাতা আবার ফাকা ছিল। জানিনা কেন। হঠাৎ মাঝের পেজ সরাতে আমি একটু অবাক হলাম। সেখানে লেখা ছিল,
২৪/১২/২০০৪
রাত যতই গভীর হচ্ছে আমার মনের ভিতর কেন যেনও নিজেকে অনেক দোষী মনে হচ্ছে। গত দুইদিন আগের ঘটনাটা আমাকে কিছুইতে ভুলতে দিচ্ছে না। শুধু নিজের কাছে বার বার একটা প্রশ্ন কেন আমি এই কাজটা করলাম। কি যে অশান্তি লাগছে বোঝানো যাবে না।
গতদুদিন আগে একটা মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আমি তো লাশের ঘরে কাজ করি। আমি সেদিন দুপুরে কাজে ছিলাম। সেদিনে প্রায় ১৫ কি ১৬ টা মরাদেহ এসেছিল। সবগুলোর পোস্টমর্টেম শেষ করে লাশগুলোকে লাশঘরে রেখে বের হতে না হতে একটা লাশ এসে হাজির। দেখলাম একটা ছেলের লাশ। বয়স ২৮/২৯ হবে। এদিকে সবাই দুপুরের খাবার খেতে চলে গেছে। শুধু আমি আর আনিস ভাই ছিলাম। তা লাশের পোস্টমর্টেম করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ মোবাইলের রিং টোনের শব্দ হচ্ছে। আমি দেখলাম আমার না। আনিস ভাই বলল তারও না। তাহলে কার ? দেখি লাশের প্যান্টের পকেট থেকে বেজে উঠলো। আমি মোবাইলটাকে বের করে দেখি সেই মৃত ব্যাক্তির স্ত্রী রিং দিচ্ছে। কি করি নিজেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাই মোবাইলটা বন্ধ করে দিলাম। এইদিকে পোস্টমর্টেম এর কাজটা সেরে আমি বাইরে বসে ছিলাম। তখন প্রায় ৫ টা বেজে গেছে। আমি কি মনে করে মোবাইলটা আবার চালু করলাম। চালু করার সাথে সাথে আবার বেজে উঠল। আমি কি করবো তা বুঝে উঠতে পারছিলাম। আবার কেটে দিলাম। কিন্তু কেটে দেওয়ার পর পর আবার বেজে উঠলো। আমি না পেরে ধরলাম,
আমি> হ্যালো
আগুন্তক> কোথায় তুমি ?{কান্নার স্বরে)
আমি মেয়েটার গলা শুনে কি বলবো কিছুই বুঝছিলাম না। অনেক ভেবে তার স্বামী সেজে কথা শুরু করলাম,
আমি> আমি তো অফিসে। কেন ?
মেয়েটা> খুব চিন্তা হচ্ছে আমার। পাশের বাড়ি ভাবী এসে বলল তোমাদের ঐখানে নাকি আগুন লেগেছে ?
আমি > হ্যাঁ কিন্তু আমি ঠিক আছি। চিন্তা করো না। আমি চলে আসবো।
মেয়েটা> তোমার গলার আওয়াজটা এমন কর্কশ ভাবে শোনা যাচ্ছে কেন ?
আমি> ঐ একটু গলায় সমস্যা হয়েছে ।
মেয়েটা > তোমার কি মনে আছে কাল সন্ধ্যায় চোখের ডাক্তারের ঐখানে নিয়ে যাবে।
আমি> চোখের ডাক্তারের ঐখানে কেন ?
মেয়েটা> আমি জানতাম তুমি ভুলে যাবে। কেন জানোনা, চোখের ডোনার পাওয়া গেছে। ডাক্তার বলেছে এবারে অপোরেশনের পর আমার চোখ ঠিক হয়ে যাবে।
আমি > ও ভুলে গেছিলাম। আগে বাসায় আসি এরপর কথা হবে। আর সাবধানে থেকো।
এই বলে ফোনটা কেটে দিলাম। ভাবছিলাম কি করবো। কিছুই মাথায় আসছে না। আমি কি একবার যাবো। গিয়ে তার স্বামীর মৃত্যুর সংবাদটা দিয়ে আসি। যাওয়াটা কি ঠিক হবে ? বাসার ঠিকানাটা কই পাই। পরে মনে পড়লো ঐ লোকের মানিব্যাগে পাওয়া যাবে। আমি লাশ ঘরে ঢুকে আশেপাশে তাকালাম কেউ আছে কিনা। তারপর আমি ঠিক মত খোজ করলাম তার মানিব্যাগ। অবশেষে পেয়ে গেলাম। কয়েকবার ভাবছিলাম যাব কি যাব না। হাতে ঘড়ীর দিক তাকিয়ে দেখি ৭ টা বেজে গেছে। লাশ ঘরের কাজ শেষ করে বের হলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে শুধু ভাবছিলাম যে যাবো কিনা। পরে চিন্তা করে দেখলাম যাই একবার। যা হবার হবে ।
একটা স্রু গলির ভিতর ৪ তালার বাড়ির ৩ তলায় থাকে। আমি দরজার চাবি ঐ মানিব্যাগে পেয়েছিলাম বলে কষ্ট হয়নি। দরজা খুলতেই দেখি এক অপরূপ পরী যেন আমার সামনে দাড়িয়ে। একেবারে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেছিলাম। কিন্তু পর মুহূর্তে মনে পড়লো সে তো অন্ধ। সে দেখি আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
মেয়ে> এই সময় হল তোমার। আমি ভয় পাচ্ছিলাম। তুমি জানো আমার এই অবস্থা তারপরও বার বার কেন এমন করো।
আমি চুপ করে দাড়িয়ে কথা শুনছি।
মেয়েটা আমার শরীরে হাত দিতেই বলে উঠলো
মেয়েটা> তোমার শরীরে এত ঘাম কেন ? আর হাতটা এই রকম শক্ত কেন ?
আমি> আজকে একটু বেশী কাজ হয়েছে তারপর বাসে এতো জ্যাম কি বলবো।
মেয়েটা> ও তাই। যাও হাত মুখ ধুয়ে নেও।
আমি আর কথা না বলে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। কি করবো বুঝছি না। বলে দিবো যে আমি সে না। কি করি ?
বাথরুম থেকে বের হয়ে আমি খাবার টেবিলে গিয়ে বসে খাচ্ছিলাম। মেয়েটা এসে বলল, তোমার আজ কি হয়েছে বল তো ? প্রতিদিন আমাকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে তারপর তুমি খেতে আজ কিছুই করলে না।
আমি বললাম, অনেক ক্ষুদা লেগে গেছিলো। তাই বসে গেছি।
এইকথা শুনে মেয়েটা চলে গেলো ঘরের দিকে। কিছুই বললনা।
আমি সব কিছু সেরে ওর জন্য খাবার নিয়ে ঘরে গেলাম। ভাবলাম কিছু খাওয়াইদি বেচারি কিছুই খাইনি মনে হয় এখনই।
ঘরে ঢুকে দেখি জানালার পাশে দাড়িয়ে কাঁদছে। আমি তো হতভাক। কাছে যেতেই আমি বললাম কেন কাদছো ?
মেয়েটা> সত্যি করে বলও তো তুমি কে ? আর কেন তুমি এইখানে এসেছো ?
এই কথা শুনার মাত্র আমার হাতের থেকে খাবারের থালাটা পড়ে গেলো মাটিতে।
আমি> তুমি কি করে বুঝলে ?
মেয়েটা> তোমার কাজ কর্ম দেখে। আমার স্বামী এমন করে না। যেগুলো তুমি করছ। আর আমার স্বামীর ঘামের গন্ধ আমি তো চিনি। আগে বলও তুমি কি উদ্দেশে এসেছ ?
এইকথা বলে মেয়েটা আমার থেকে আরও দূরে সড়ে গেলো।
আমি সাহস পাচ্ছিলাম না। উলটা আরও ভয় পাচ্ছিলাম যে সে আবার চেচিয়ে না উঠে। আমি তাকে বললাম, একটু শান্ত হন। আমি সব খুলে বলছি।
আমি আর কিছুই গোপন করলাম না। সব কিছু তাকে বলে দিলাম।
মেয়েটা এতো কান্না করলো যে তা দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়লো। কি যে অসহায় লাগছিলো ওকে। ঘড়ীর দিক তাকিয়ে দেখি রাত ৪ টা বেজে গেছে। আমি দেখলাম মেয়েটা জানালার পাশে বসে রইল। কোন কথা বলিনি। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। এরপরও মেয়েটা কোন কথা বলিনি।
পরের দিন সকাল বেলা আমি আমার কাজের ঐখানে বসে কাজ করছিলাম। আনিস ভাই বলল, একটা আত্মহত্যার লাশ এসেছে। এখন পোস্টমর্টেম করা লাগবে। আমি বললাম আসতেছি আপনি যান।
আমি লাশ কাটা ঘরে ঢুকে আনিস ভাইকে বললাম যন্ত্রটা নিয়ে আসো। এইবলে লাশের মুখের উপর দিয়ে কাফনের কাপড়টা তুলা মাত্র আমি এক চীৎকার দিয়ে ঐখানে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি আমি বিছানায় শুয়া। আনিস ভাই বলল কি হয়েছে রে, আমি কিছুই বললাম না । শুধু জিজ্ঞাসা করলাম লাশটা কোথায় ? আনিস ভাই বলল, লাশটার দাফন হয়ে গেছে দুপুরে। ঘড়ীর দিক তাকিয়ে দেখি প্রায় ১০ টা বেজে গেছে। আর আমি আমার ঘরে। আর সে এখন কবরে। আমি সত্যি নিজেকে মাফ করতে পারছি না। কেন গতকাল রাতে আমি ঐ মেয়েটা কেন বলতে গেলাম। না বললে আজ হইত সে বেচে থাকত।
ঘড়ীর দিক তাকিয়ে দেখি ৩ টা বেজে গেছে। গল্পটা পড়ে ডাইরিটা বন্ধ করে ঘুমাতে যাবো। কি মনে করে আমি ক্যালেন্ডারের দিক তাকিয়ে দেখি আজ ২৪/১২/২০০৫।
নিলন্তি ও নিলয়
সকাল ১০ টা বাজে। আমি ঘরে একটা কাজ করছিলাম। কি যে করছিলাম তা আমার মনে নেই। হঠাৎ আমার ফোনের রিং টোন বেজে উঠলো। ধুর কে আবার এই সময় কল করলো। ফোনের কাছে যেতেই দেখি নীলয়। ফোনটা ধরে,
আমি> আরে নিলয় কবে আসলি ঢাকা থেকে।
কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো নিলয়ের কাছ থেকে।
আমি> কি হয়েছে ভাই তোর ?
নিলয়> ভাইয়া তুমি এখনই আসো আমার মনটা ভালো নাই
আমি> আচ্ছা ভাই আমি আসতাছি।
এই বলে আমি ফোনটা কেটে দিলাম। ভাবলাম নিলন্তি তো চলে গেছে ক্যানাডায় এই কারণে ওর মন খারাপ।
আমি কাপড়টা পড়ে বের হলাম ওদের বাসার দিকে। আর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ওদের সেদিনের কথা গুলো আমার মনে পড়ে গেলো। কি প্রেম ছিল ওদের।
আমার সাথে নিলয়ের পরিচয় হয় ২০১৫ এর দিকে সাতরাস্তার মোড়ে। সেই থেকে আজ অবধি আমরা ভাই ভাই। ওর প্রেমের কাহিনী শুরু হয় আগস্টের দিকে। আগস্টের এক দুপুরে আমি আর আমার একবন্ধু হাটতেছিলাম বড় মাঠের পাশ দিয়ে। হঠাৎ নিলয় ফোন দিয়ে বলল নিলয় > ভাই তুমি কই আছো। দেখা করা লাগবে। খুব জরুরী কথা আছে।
আমি > আমি এইখানে আছি। এই বলে ফোন রেখে দিলাম।
সে দেখি রিকশায় করে চলে এলো। আমাকে এসে জড়িয়ে ধরল।
নিলয়> ভাই আমি একটা মেয়েকে ভালবেসে ফেলছি। আজকে তাকে প্রপোজ করবো।
আমি > শুনে বললাম ভালো তো। আমাকে কি করতে হবে বল।
নিলয়> না ভাই কিছুই না। আমি আসলাম একটা কথা বলতে। কথাটা হল আমার এই বি বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা নাই।
আমি> বললাম ভাল লাগলে অবশ্যই করবি। এর আবার কিসের অভিজ্ঞতা লাগবে। তোর মনে যা আছে সব বলে দিবি ওকে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এরপর আরও কিছু কথা হল। আমার বন্ধুও তাকে কিছি পরামর্শ দিলো।
আমি>যা সময় নষ্ট করিস না।
এরপর নিলয় চলে গেলো। রাতে শুনলাম সব সুন্দর ভাবে হয়েছে।
আমি ওদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। দেখতাম তাদের ভালবাসা। খুব হাসিখুশি ছিল নিলয় আর নিলন্তী। ২০১৬ সালের দিকের কথা, এক বিকেলে নীলয় আর আমি ফরেস্ট ঘাট এলাকায় ঘুরতে ছিলাম।
নিলয়> ভাই একটা খবর আছে ?
আমি> কি বল ?
নিলয়> ভাই নিলন্তী তো ক্যানাডায় চলে যাচ্ছে।
আমি> তা তো ভাল খবর। তা কবে যাচ্ছে ?
নিলয়> এই তো দুইমাস পর। কিন্তু ভাই ও তো আমাকে ছাড়া আর আমি ওকে ছাড়া কেমন করে থাকব বলও ?
আমি > আরে ব্যাপার না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর পড়ালেখা শেষ হয়ে গেলে তুইও চলে যাবি।
নিলয়> ভাই বিয়েটা কি করে ফেলবো।
আমি > আরে ধুর বোকা। এই কাজ এখন করিস না। এতে কষ্ট আরও বাড়বে ।
নিলয়> কিন্তু ওর পরিবার আমাদের এই সম্পর্কে রাজি না।
আমি> আরে শোন রাজি হয়ে যাবে একদিন দেখিস। যদি কপালে লেখা থাকে তোর সাথে নিলন্তীর বিয়ে তা হলে হবে।
তারপর দুজনে এক চায়ের দোকানে বসে চা পান করলাম আর সিগারেট টানতে টানতে অন্য কথা বলছিলাম।
আমি সত্যি ওদের জুটি দেখেছি। খুব ভাল। নিলয় আমাকে অনেক কিছুই বলত। এমন কি নিলন্তীর যাওয়ার আগের রাতে নীলয় কেঁদেছিল আমার সামনে। ও যে এত ভালবাসত নিলন্তীকে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। নামের ও একটা মিল নিলয় আর নিলন্তী।
এই সব চিন্তা করতে করতে নিলয়ের বাসায় আসলাম। এসে কলিং বেল দিতেই ওর আম্মা এসে গেট খুলে দিলো। আমাকে বলল ও ঘরে আছে। ওর আম্মার দিক তাকিয়ে বুঝলাম সেও খুব চিন্তায় আছে তার ছেলেকে নিয়ে।
ঘরে ঢোকা মাত্র নিলয় আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো আর বলল ভাইয়া নিলন্তী আমার ভালবাসা বুঝলোনা। সব কিছু এইভাবে ধুলাই মিশে যাবে তা কল্পনা করিনি। আমি এই কথা শুনে মনে হল আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমি বললাম এ কি হয়েছে আগে খুলে বল। আর কান্না থামা।
নিলয়> গতকাল ওকে এয়ারপোর্টে থেকে বিদায় দেওয়ার সময় আমাকে বলল ও নাকি আমাকে কোনদিন ভালবাসিনি। এতদিন ও আমার সাথে নাটক করে গেছে। আর বলেছে তার সাথে কোন ভাবে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেছে। আর আমি তার পছন্দের না। ওর মত ছেলের সাথে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। সবার সামনে আমাকে অপমান করেছে। আগে যা যা হয়েছে সব মিথ্যা। ভাই বলো এই শুনে মাথা কি ঠিক থাকে। আমি হতাশ হয়ে পরেছি। ওর কথা শুনে। আমি ভাবতেই পারছিনা এমন করলো কেন ?
আমি হা করে ওর কথা গুলো শুনছিলাম। এরপর
আমি> কি বলিস এইগুলা ? এমন কাজ করবে আমি ভাবতেই পারিনি। শোন যা হবার হয়ে গেছে।
নিলয়> না ভাই। আমি ওর কি ক্ষতি করেছি যে আমার সাথে এই করলো।
আমি> সেটা তো আমি জানি। তোদের প্রেম এ কোন ভুল ছিল না। আমারই মাথায় আসছে না। আর কান্না থামা। ছেলে মানুষ কাঁদে নাকি। চুপ কর। আর বাইরে চল।
আমি অনেক ভাবে ওকে থামানোর চেষ্টা করলাম।
এরপর ওকে বুঝিয়ে বাইরে নিয়ে গেলাম। ও আমার কাছে একটা আবদার করেছিল। সেটা এখনো গোপনে রেখে দিছি। সময় হলে সবাই জানতে পারবে।
ঐদিন ওর দুঃখ আর কান্না দেখে আমি নিজেই কেঁদেছিলাম। আজও মনে রেখে দিছি।