সকাল ১০ টা বাজে। আমি ঘরে একটা কাজ করছিলাম। কি যে করছিলাম তা আমার মনে নেই। হঠাৎ আমার ফোনের রিং টোন বেজে উঠলো। ধুর কে আবার এই সময় কল করলো। ফোনের কাছে যেতেই দেখি নীলয়। ফোনটা ধরে,
আমি> আরে নিলয় কবে আসলি ঢাকা থেকে।
কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো নিলয়ের কাছ থেকে।
আমি> কি হয়েছে ভাই তোর ?
নিলয়> ভাইয়া তুমি এখনই আসো আমার মনটা ভালো নাই
আমি> আচ্ছা ভাই আমি আসতাছি।
এই বলে আমি ফোনটা কেটে দিলাম। ভাবলাম নিলন্তি তো চলে গেছে ক্যানাডায় এই কারণে ওর মন খারাপ।
আমি কাপড়টা পড়ে বের হলাম ওদের বাসার দিকে। আর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ওদের সেদিনের কথা গুলো আমার মনে পড়ে গেলো। কি প্রেম ছিল ওদের।
আমার সাথে নিলয়ের পরিচয় হয় ২০১৫ এর দিকে সাতরাস্তার মোড়ে। সেই থেকে আজ অবধি আমরা ভাই ভাই। ওর প্রেমের কাহিনী শুরু হয় আগস্টের দিকে। আগস্টের এক দুপুরে আমি আর আমার একবন্ধু হাটতেছিলাম বড় মাঠের পাশ দিয়ে। হঠাৎ নিলয় ফোন দিয়ে বলল নিলয় > ভাই তুমি কই আছো। দেখা করা লাগবে। খুব জরুরী কথা আছে।
আমি > আমি এইখানে আছি। এই বলে ফোন রেখে দিলাম।
সে দেখি রিকশায় করে চলে এলো। আমাকে এসে জড়িয়ে ধরল।
নিলয়> ভাই আমি একটা মেয়েকে ভালবেসে ফেলছি। আজকে তাকে প্রপোজ করবো।
আমি > শুনে বললাম ভালো তো। আমাকে কি করতে হবে বল।
নিলয়> না ভাই কিছুই না। আমি আসলাম একটা কথা বলতে। কথাটা হল আমার এই বি বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা নাই।
আমি> বললাম ভাল লাগলে অবশ্যই করবি। এর আবার কিসের অভিজ্ঞতা লাগবে। তোর মনে যা আছে সব বলে দিবি ওকে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এরপর আরও কিছু কথা হল। আমার বন্ধুও তাকে কিছি পরামর্শ দিলো।
আমি>যা সময় নষ্ট করিস না।
এরপর নিলয় চলে গেলো। রাতে শুনলাম সব সুন্দর ভাবে হয়েছে।
আমি ওদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। দেখতাম তাদের ভালবাসা। খুব হাসিখুশি ছিল নিলয় আর নিলন্তী। ২০১৬ সালের দিকের কথা, এক বিকেলে নীলয় আর আমি ফরেস্ট ঘাট এলাকায় ঘুরতে ছিলাম।
নিলয়> ভাই একটা খবর আছে ?
আমি> কি বল ?
নিলয়> ভাই নিলন্তী তো ক্যানাডায় চলে যাচ্ছে।
আমি> তা তো ভাল খবর। তা কবে যাচ্ছে ?
নিলয়> এই তো দুইমাস পর। কিন্তু ভাই ও তো আমাকে ছাড়া আর আমি ওকে ছাড়া কেমন করে থাকব বলও ?
আমি > আরে ব্যাপার না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর পড়ালেখা শেষ হয়ে গেলে তুইও চলে যাবি।
নিলয়> ভাই বিয়েটা কি করে ফেলবো।
আমি > আরে ধুর বোকা। এই কাজ এখন করিস না। এতে কষ্ট আরও বাড়বে ।
নিলয়> কিন্তু ওর পরিবার আমাদের এই সম্পর্কে রাজি না।
আমি> আরে শোন রাজি হয়ে যাবে একদিন দেখিস। যদি কপালে লেখা থাকে তোর সাথে নিলন্তীর বিয়ে তা হলে হবে।
তারপর দুজনে এক চায়ের দোকানে বসে চা পান করলাম আর সিগারেট টানতে টানতে অন্য কথা বলছিলাম।
আমি সত্যি ওদের জুটি দেখেছি। খুব ভাল। নিলয় আমাকে অনেক কিছুই বলত। এমন কি নিলন্তীর যাওয়ার আগের রাতে নীলয় কেঁদেছিল আমার সামনে। ও যে এত ভালবাসত নিলন্তীকে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। নামের ও একটা মিল নিলয় আর নিলন্তী।
এই সব চিন্তা করতে করতে নিলয়ের বাসায় আসলাম। এসে কলিং বেল দিতেই ওর আম্মা এসে গেট খুলে দিলো। আমাকে বলল ও ঘরে আছে। ওর আম্মার দিক তাকিয়ে বুঝলাম সেও খুব চিন্তায় আছে তার ছেলেকে নিয়ে।
ঘরে ঢোকা মাত্র নিলয় আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো আর বলল ভাইয়া নিলন্তী আমার ভালবাসা বুঝলোনা। সব কিছু এইভাবে ধুলাই মিশে যাবে তা কল্পনা করিনি। আমি এই কথা শুনে মনে হল আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমি বললাম এ কি হয়েছে আগে খুলে বল। আর কান্না থামা।
নিলয়> গতকাল ওকে এয়ারপোর্টে থেকে বিদায় দেওয়ার সময় আমাকে বলল ও নাকি আমাকে কোনদিন ভালবাসিনি। এতদিন ও আমার সাথে নাটক করে গেছে। আর বলেছে তার সাথে কোন ভাবে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেছে। আর আমি তার পছন্দের না। ওর মত ছেলের সাথে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। সবার সামনে আমাকে অপমান করেছে। আগে যা যা হয়েছে সব মিথ্যা। ভাই বলো এই শুনে মাথা কি ঠিক থাকে। আমি হতাশ হয়ে পরেছি। ওর কথা শুনে। আমি ভাবতেই পারছিনা এমন করলো কেন ?
আমি হা করে ওর কথা গুলো শুনছিলাম। এরপর
আমি> কি বলিস এইগুলা ? এমন কাজ করবে আমি ভাবতেই পারিনি। শোন যা হবার হয়ে গেছে।
নিলয়> না ভাই। আমি ওর কি ক্ষতি করেছি যে আমার সাথে এই করলো।
আমি> সেটা তো আমি জানি। তোদের প্রেম এ কোন ভুল ছিল না। আমারই মাথায় আসছে না। আর কান্না থামা। ছেলে মানুষ কাঁদে নাকি। চুপ কর। আর বাইরে চল।
আমি অনেক ভাবে ওকে থামানোর চেষ্টা করলাম।
এরপর ওকে বুঝিয়ে বাইরে নিয়ে গেলাম। ও আমার কাছে একটা আবদার করেছিল। সেটা এখনো গোপনে রেখে দিছি। সময় হলে সবাই জানতে পারবে।
ঐদিন ওর দুঃখ আর কান্না দেখে আমি নিজেই কেঁদেছিলাম। আজও মনে রেখে দিছি।