প্যারিসের শেষ চিঠি

20190408_160930

কলিং বেলের শব্দে মিমির হাত থেকে কাপটা পড়ে ভেঙ্গে গেল।

মিমি> ধ্যাত এই সময় আবার কে এলো।

দরজাটা খুলে দেখে পিয়ন দাঁড়ানো।

মিমি> একটু বিরক্তি ভাবে বলল কি?

পিয়ন> নুসরাত জাহান মিমি আছে কি?

মিমি> আমি। বলুন

পিয়ন> আপনার নামে একটা চিঠি এসেছে। এই নিন।

মনে মনে মিমি বলল আমার নামে চিঠি কে পাঠালো

মিমি > কোথার থেকে চিঠি ?

পিয়ন> বিদেশ থেকে

মিমি চিঠিটা পিয়নের কাছ থেকে নিয়ে ঘরে চলে এলো। চিঠিটা ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে রান্না ঘরে চলে গেল। সারাদিন কাজ শেষ করে বিকেল বেলা বারান্দায় চেয়ারে বসে চা পান করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়লো চিঠিটার কথা। চায়ের কাপটা রেখে দৌড় দিয়ে চিঠিটা আনতে গেল।

সাদা খামে মোড়ানো চিঠিটা। চিঠির উপরে ঠিকানা দেখে বুঝলো এটা প্যারিস থেকে আসা। মিমি ভাবলও কে? ও চিঠিটা খুলল,

প্রিয় জানুবানু,

কেমন আছো ? চিঠিটা জানিনা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা। যদি তুমি চিঠিটা পাও আমি ততক্ষন এই দুনিয়াতে থাকবো না। আমি জানি তুমি আমার উপর অনেক অভিমান করে আছো। কিন্তু আমি তোমাকে সবসময় ভালবেসে গেছি। আমি কি এমন দোষ করেছি যে তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেছ। যার কারনে মনে হয় আজ আমার এই অবস্তা। শুনেছি তোমার নাকি অনেক বনেদী ঘরে ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে। অনেক সুখে দিন কাটাচ্ছো। আজ না প্যারিসে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল তোমার প্রিয় তুষার পাত হয়েছিল। আমি সেই তুষার পাতের সাথে তোমায় নিয়ে অনেক কথা বলেছি। প্যারিসের তুষার পাতে তোমার প্রিয় ভালবাসার শহরটা সাদা হয়ে গিয়েছিল। আমি অনেক অনেক অনেক মিস করেছি গতকাল তোমায়। আমার তো ঠাণ্ডা লাগানো নিষেধ। ডাক্তার বলেছিল ঠাণ্ডা লাগালে আমার পরিস্থিথি অনেক খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু কি করবো বল আমি তো গতকালের তুষার পাতকে তুমি ভেবে সারারাত জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম। সকালে উঠে দেখি সারা বরফের রং লাল হয়ে গিয়েছে। তার কিছুক্ষন পর বৃষ্টি হয়েছিল। সেই বৃষ্টিতে সব লাল রং মুছে গেছে। কারণ তুমি তো লাল রং পছন্দ করো না। তাই তোমার সুর বৃষ্টি সেটাকে ধুয়ে দিয়েছে। জানু তোমাকে আমি খুব মিস করছি। আজ তোমার আইফেল টাওয়ারটায় সন্ধ্যার বাতি দিতে ভুলে গেছে। আজ তুমিও নাই তাই প্যারিসে মনে হয় শোখের তাপ হচ্ছে। আমি তোমার প্রিয় বারান্দায় তোমার দেওয়া ভালবাসার হাওয়া দিয়ে তোমাকে লিখছি আমার জীবনের শেষ চিঠি। আমি গত এক বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছি। কিভাবে বেচে আছি তা বলতে পারবো না। মনে হয় তোমার ভালবাসার কারণে। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আমার । ভালও থেকো।

ইতি তোমার

পাগল।

মিমি কিছুক্ষন থমকে গেল। হাত থেকে চায়ের কাপটা পড়ে গেল। আর তার চোখ থেকে পানি পড়লো। সেই সময় ঝড়ো বাতাসে হাত থেকে চিঠিটা উড়ে গেল  রাস্তায় গিয়ে পড়লো। আর হালকা বৃষ্টিতে সেই চিঠিটা ভিজতে লাগলো। আর মিমি বারান্দায় স্থির ভাবে বসে ছিল আর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকলো।

 

 

Leave a comment